রাসুল (সা:) বলেন পূর্ণরূপে ওজু করে নিম্নের দুআটি পাঠ করলে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়

পাক-পবিত্রতা অর্জনের জন্য শরীয়তের হুকুম মত পাক পানি দিয়ে শরীরের নিদিষ্ট কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ধৌত করা ও মাথা মাসেহ্‌ করাকে অজু বলে। শরীরকে পাক করতে হলে অজু বা গোসল করা বাঞ্চনিয়।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-মু’মিন মুসলমান বান্দা যখন অজু করে তখন তার মুখ ধৌত করার সময় পানির সঙ্গে চক্ষের কৃত যাবতীয় গুনাহ ঝরে যায়। হাত ধুইবার সময় হাতের দ্বারা কৃত গুনাহসমূহ পানির সঙ্গে ঝরে যায়। পা ধৌত করার সময় পদার্জিত যাবতীয় গুনাহ পানির সঙ্গে ঝরে যায়। এভাবে ঐ বান্দা সকল গুনাহ হতে পবিত্র হয়ে যায়। (মুসলিম শরীফ)
অন্য হাদীসে আছে-
ওয়া ক্বালা আ’লাইহিছছালামু, ইন্না উম্মাতি ইয়াদউনা ইয়াওমাল কি-ইয়ামাতি গুররাম মুহাজ্জিলিন মিন আছা রির াজুয়ী ফামানিছ তাত্বয়া আইয়্যু ত্বিলা গুররা তাহু, ফাল ইয়াফ্‌ আ’ল। (রাওয়াহুর বুখারী)
অর্থ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্রাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন যখন আমার উম্মতকে ডাকা হবে, তখন তারা তাদের চাকচিক্যপূর্ণ অজুর অঙ্গগুলো নিয়ে হাজির হবে। অতএব যারা অধিক চাকচিক্যময় স্থান করতে চাও তারা অজুর দ্বারা করতে পার। (বুখারী শরীফ)
ওয়া আ’নহু আ’লাইহীছছালামু, মান তাওয়াজ্জাআ আ’লা তুহ্‌রী কুতিবা লাহু আ’শারু হাছানাতিন। (রাওয়াহুত তিরমিযী)

অর্থ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় পুনরায় অজু করবে তার জন্য দশটি নেকী লেখা হবে। (তিরমিযী শরীফ)

নামাযের সময়, কুরআন তেলাওয়াতের পূর্বে প্রতিদিন আমরা ওজু করি। সুন্দর ও সঠিকভাবে ওজু করে ছোট্ট একটি দুআ পাঠ করুন। জান্নাতের আটটি দরজা আপনার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা, আপনি প্রবেশ করতে পারবেন। এই সুন্দর ও সহজ সুন্নাতটি আদায় করতে দশ সেকেন্ডের বেশি সময় লাগবে না। অথচ উপকার কত বড়! হযরত উকবা ইবনে আমের রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ওজু করে, আর সে পূর্ণরূপে সুন্দর করে ওজু করে, এরপর সে নিম্নের দুআটি পাঠ করে, তাহলে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সে প্রবেশ করতে পারে।’ (মুসলিম শরীফ, হাদীস-৩৪৫) দুআটি এই :

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ
وَرَسُولُه

উচ্চারণ : আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুল্লাহি ওয়া রাসূলুহু। অন্য একটি হাদীসে আরেকটি দুআ বর্ণিত আছে এবং সেই দুআটি পড়লেও জান্নাতের আটটি দরজা পাঠকারীর জন্য খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

হযরত ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ভালোভাবে ওজু করে নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে যেকোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা, প্রবেশ করতে পারে।’ (তিরমিযী শরীফ, হাদীস-৫০) দুআটি এই

:أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنْ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنْ الْمُتَطَهِّرِينَ

উচ্চারণ: আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু, আল্লাহুম্মাজ-আলনী মিনাত-তাওয়া-বীনা, ওয়াজ-আলনী মিনাল-মুতা-তহহিরীন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ওজুঃ

ওজুর ফরজ চারটি।

মহান আল্লাহ্‌ বলেন- “হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতের জন্যে দাড়াও, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মুছেহ কর এবং পদযুগল গিটসহ ধৌত কর। (সুরা আল মাইদাঃ ৬)

রসুলুল্লাহ (সাঃ) ওজুর সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে-

১. বিসমিল্লাহ্‌ বলে ওজু শুরু করা।

২. প্রথমে ডান হাত, অতঃপর বাম হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।

৩. অতঃপর কুলি করা।

৪. নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা।

৫. সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করা।

৬. প্রথমে ডান হাত, অতঃপর বাম হাত হাতের কুনুই পর্যন্ত ধৌত করা।

৭. মাথা কপালের শুরু থেকে পিছনের শেষ চুল পর্যন্ত মাসাহ করা। অতঃপর কান মাসাহ করা।

৮. সবশেষে প্রথমে ডান পা, অতঃপর বাম পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা।

উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশের নামায শিক্ষা নামের বই গুলোতে ওজুর শুরুতে একটি দোয়া বলার বিধান আছে, কিন্তু ঐ দুয়াটি জাল। ওজুর শুরুতে “বিসমিল্লাহ্‌” ব্যাতিত অন্য কিছু পড়ার বিধান নেই তাই ঐ জাল দুয়া পড়া বিদআত।

বিসমিল্লাহ্‌ পড়ার দলিলঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন, যার ওজু নেই তার সালাত হয় না, আর যে বিসমিল্লাহ্‌ বলে না তার ওজু হয় না। (আহমাদ, ২য় খন্ড, হাদিস নং- ৪১৮। আবু দাউদ, ১ম খন্ড, হাদিস নং- ১৬]

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ ওজুর সময় কাঁধ মাসাহ করা বিদআত। কাঁধ মাসাহ করার কোন সহিহ হাদিস নেই।

এবং মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত আছে যে, মাথা চার ভাগের এক ভাগ মাসাহ করা, এই বিধানটি সঠিক নয় বরং সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করতে হবে, একেবারে কপালের শুরু থেকে পিছনের শেষ চুল পর্যন্ত।

কান মাসাহ করার দলিলঃ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লেলাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ওযুর সময়) মাথা মাসাহ করলেন এবং দুই কানের ভিতরে ও বাহিরে মাসাহ করলেন। (তিরমিযি, ১ম খন্ড, পবিত্রতা অধ্যায়, হাদিস নং- ৩৬)

আরেকটি বিষয়ঃ মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত আছে যে, ওজুর অঙ্গ গুলো ৩ বার করে ধৌত করতেই হবে। আসলে ৩ বার করে ধৌত করতেই হবে –এমনটি নয়। ওজুর অঙ্গ গুলো ১ বার করে অথবা ২ বার করে অথবা ৩ বার করে ধৌত করার বিধান রয়েছে। তবে পানির অপচয় করা হারাম।

আবূল ইয়ামান (রহঃ) ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)- এর আযাদকৃত গোলাম হুমরান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি ‘উসমান (রাঃ)- কে উযূর পানি আনাতে দেখলেন। তারপর তিনি সে পাত্র থেকে উভয় হাতের উপর পানি ঢেলে তা তিনবার ধুয়ে ফেললেন। এরপর তাঁর ডান হাত পানিতে ঢুকালেন। এরপর কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝেড়ে ফেললেন। এরপর তাঁর মুখমণ্ডল তিনবার এবং উভয় হাত কুনই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন, এরপর মাথা মাসেহ করলেন। এরপর প্রত্যেক পা তিনবার ধোয়ার পর বললেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার এ উযূর ন্যায় উযূ করতে দেখেছি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যাক্তি আমার এ উযূর ন্যায় উযূ করে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করবে এবং তার মধ্য কোন বাজে খেয়াল মনে আনবে না, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দিবেন। [সহিহ বুখারী, ১ম খন্ড, ওজু অধ্যায়, হাদিস নং- ১৬৫]

ওজুতে পা দুটি সঠিকরূপে ভিজিয়ে ধৌত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণঃ

মূসা (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে আমাদের পিছনে রয়ে গিয়েছিলেন, এরপর তিনি আমাদের কাছে পৌঁছে গেলেন। তখন আমরা আসরের সালাত (নামায) শুরু করতে দেরী করে ফেলেছিলাম। তাই আমরা উযূ করছিলাম এবং (তাড়াতাড়ির কারনে) আমাদের পা মাসেহ করার মত হালকা ভাবে ধুয়ে নিচ্ছিলাম। তখন তিনি উচ্চস্বরে বললেনঃ ‘পায়ের গোড়ালির জন্য জাহান্নামের আযাব রয়েছে’। দুবার অথবা তিনবার তিনি একথা বললেন। [সহিহ বুখারী, ১ম খন্ড, ওজু অধ্যায়, হাদিস নং- ১৬৪]

আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু যিয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকেরা সে সময় পাত্র থেকে উযূ করছিল। তখন তাঁকে বলতে শুনেছি, তোমরা উত্তমরূপে উযূ কর। কারন আবূল কাসিম বলেছেনঃ পায়ের গোড়ালীগুলোর জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে। [সহিহ বুখারী, ১ম খন্ড, ওজু অধ্যায়, হাদিস নং- ১৬৬]

মোযা, পাগড়ী উপর মাসাহ সম্পর্কিত মাসআলা :

পবিত্র অবস্থায় (ওজু বা গোসল করে) মোজার পরিধান করলে পরবর্তীতে ওজু ভেঙ্গে গেলে পুনরায় ওজু করে মোজা খুলে পা ধোয়ার পরিবর্তে মোযার উপরে মাসাহ করলেই চলবে।

উমায়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর পাগড়ীর ওপর এবং উভয় মোজার ওপর মাসেহ করতে দেখেছি। ’ মা’মার (রহঃ) আমর (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেনঃ “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা করতে দেখেছি। ” [সহিহ বুখারী, ১ম খন্ড, ওজু অধ্যায়, হাদিস নং- ২০৫]

আবূ নু’আয়ম (রহঃ) মুগীরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। (উযূ করার সময়) আমি তাঁর মোজাদ্বয় খুলতে চাইলে তিনি বললেনঃ ‘ওদুটো থাকুক, আমি পবিত্র অবস্থায় ও দু’টি পরেছিলাম। ’ (এই বলে) তিনি তার ওপর মাসেহ করলেন। [সহিহ বুখারী, ১ম খন্ড, ওজু অধ্যায়, হাদিস নং- ২০৬]

উল্লেখ্য যে, মোযার উপর মাসাহ করার সময় তার উপরিভাগ মাসাহ করতে হবে। অর্থাৎ পায়ের পাতার উপর মাসাহ করতে হবে। মোযার নিম্নভাগ ও পেছনের দিকে মাসাহ করা বৈধ নয়।

আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,

দ্বীন যদি মানুষের বিবেক-বুদ্ধি অনুসারেই হত, তাহলে মোযার উপরিভাগ অপেক্ষা নিম্নভাগ মাসাহ করাই উত্তম হত। অথচ আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি, তিনি তাঁর মোযাদ্বয়ের উপর দিকেই মাসাহ করতেন। [আবু দাউদঃ ১৬২]

————————-
মজার মজার ভিডিও দেখুন টাচ করে